স্বদেশ ডেস্ক:
নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা যুবলীগের সম্মেলন আগামী ২৩ নভেম্বর। বিশুদ্ধ নেতৃত্ব গঠন নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও আলোচনার শেষ নেই। নানা অপকর্মে যুবলীগের বর্তমান কমিটি বিতর্কিত হয়ে পড়ায় অনেকেই মনে করছেন, এবার যুবলীগের নেতাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে।
পরিচ্ছন্ন ও মেধাবী সাবেক ছাত্রনেতাদের ঠাঁই হবে কেন্দ্রীয় কমিটিতে। সেই আশায় স্বচ্ছ ও ক্লিন ইমেজের প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের শীর্ষ মহলের সুনজর পাওয়ার জন্য চেষ্টা-তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের নেতারাও চাইছেন তৃণমূলপর্যায়ে সংগঠনকে নতুন করে সুসংগঠিত করার জন্য যুবলীগে নির্ভেজাল নেতৃত্ব আসুক।
সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ প্রধান ইতোমধ্যে যুবলীগের নেতাদের বয়সসীমা ৫৫ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। বয়সসীমার ফাঁদে পড়ে যুবলীগ পরিচালনা করার মতো স্বচ্ছ, ক্লিন ইমেজ, দক্ষ ও ত্যাগী বেশ কিছু নেতা বাদ পড়ছেন।
এ ছাড়া যুবলীগের আগের কমিটি তিন বছরের পরিবর্তে সাত বছরের বেশি সময় পার করেছে। ফলে সব কিছু বিবেচনা করে শুধু সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে বয়সসীমার বিষয়টি প্রথমবারের মতো শিথিল করার চিন্তা করছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। দলের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশ সফর শেষে দেশে ফিরলেই এ ব্যাপারে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।
জানা গেছে, সম্প্রতি ক্যাসিনোকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে যুবলীগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরীকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এরপর থেকেই আলোচনা শুরু হয়েছে কে হচ্ছেন যুবলীগের চেয়ারম্যান।
আগের কমিটি তিন বছরের পরিবর্তে সাত বছরেরও বেশি সময় পার করায় সাধারণ সম্পাদক পদেও পরিবর্তনের আভাস পাওয়া গেছে। চেয়ারম্যান পদে আলোচনায় আছেন যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক চয়ন ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য আতাউর রহমান, অ্যাডভোকেট বেলাল হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার নিখিল গুহ, অ্যাডভোকেট মোতাহার হোসেন সাজু, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদসহ বেশ কয়েকজন।
সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের দুই ছেলে শেখ ফজলে ফাহিম ও শেখ ফজলে নাঈম, যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, মনজুর আলম শাহীন, সুব্রত পাল ও নাসরিন জাহান চৌধুরী শেফালী, সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ বদিউল আলম, আবু আহমেদ নাসিম পাভেলসহ অন্তত এক ডজন নেতা।
এরমধ্যে মনজুর আলম শাহীন ১৯৮০ সালে ফেনী সরকারি পাইলট হাইস্কুল শাখা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সর্বশেষ ১৯৯০ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ১৯৯২ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন।
তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, দীর্ঘ চল্লিশ বছর বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পতাকাতলে অবস্থান করে দলের চড়াই-উতরাইয়ের সময় একজন একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছি। ওয়ান ইলেভেনের সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুবলীগকে সংগঠিত করেছি এবং নেত্রীর মুক্তির জন্য সব আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে সক্রিয় ছিলাম। নেত্রী যেখানে যে দায়িত্ব দেবেন পালন করতে প্রস্তুত আছি।
যুবলীগের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুব্রত পাল। ২০০৩ থেকে ২০১২ পর্যন্ত সংগঠনের প্রচার সম্পাদক ছিলেন। ছাত্ররাজনীতিতে তিনি তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
সুব্রত পাল বলেন, দলের দুঃসময়ে আমরা কাজ করেছি, আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকাবস্থায় বিভিন্ন ইস্যুতে রাজপথে সক্রিয় ছিলাম। ওয়ান ইলেভেনে নেত্রীর মুক্তি আন্দোলনে রাজপথে মিছিল-মিটিং করেছি। আমি আওয়ামী পরিবারের সন্তান। নেত্রীর প্রতি আস্থা আছে। নেত্রী যখন যে দায়িত্ব দেবেন মাথা পেতে নেব।
যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ বদিউল আলম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়াও জনস্বার্থে বিভিন্ন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখার জন্য স্কুল, কলেজ ও হাসাপাতাল গড়ে তুলেছেন তিনি।
মুহাম্মদ বদিউল আলম বলেন, ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে গিয়ে অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। ১৯৯৪ সালে চট্টগ্রামের পটিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক থাকাবস্থায় তৎকালীন বিএনপি সরকারের সন্ত্রাসীদের রামদার আঘাতে মারাত্মক আহত হই।
তিনি বলেন, যুবলীগের সম্মেলনের পুরো প্রস্তুতি চলছে। যুবলীগের সাংগঠনিক নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। নেত্রীর প্রতি অগাধ আস্থা ও বিশ্বাস আছে। তিনি যেখানে রাখবেন সেখানেই থাকব।
যুবলীগের নেতৃত্ব প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক সাংবাদিকদের বলেন, যাদের স্বচ্ছ ও ক্লিন ইমেজ আছে, যাদের কোনো বিতর্ক নেই তারাই যুবলীগের নেতৃত্বে আসবেন।
বয়সসীমা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যুবলীগের প্রথম গঠনতন্ত্র আমার কাছে আছে। সেখানে স্পষ্ট লেখা রয়েছে, ৩৫ বছরের বেশি কেউ যুবলীগ করতে পারবে না। আমাদের নেত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন একটি নির্দিষ্ট বয়সসীমার মধ্যে যুবলীগকে নিয়ে আসার। আমার মনে হয়, নেত্রীর এ সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।